১৩ সপ্তাহ এই কোর্স করে তুমি কী শিখেছ?
আমার পাবলিক স্পিকিং কোর্সের ৩য় ব্যাচের জনৈক ছাত্র (নাম প্রকাশ করছি না) কোর্স শেষ করার পর সার্টিফিকেটের ছবিসহ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়। কমেন্ট সেকশনে তাকে একজন জিজ্ঞেস করে যে, ১৩ সপ্তাহের এই কোর্স করে তুমি কী শিখেছ? উত্তরে সে বলে (আমি হুবহু তুলে ধরছি) —
Bhaiya, I developed the following area’s
- English fluency
- Extempore presentation skills
- Presentation with build a story
- Making PowerPoint properly
- Not read from slides
- Begin with an eye-opener
- Use facts, not generalities
- Skip the jargon while presenting
- Prepare some questions instantly
সে প্রেজেন্টেশনে ছিল একেবারেই নতুন ও কাঁচা। প্রথমদিকে তো ইংরেজিতে বাক্য তৈরি করে সবার সামনে কথাই বলতে পারত না। আর বলার সময় এতটাই চাপ নিত যে প্রচণ্ড উদ্বেগের ফলে প্রচুর নড়াচড়া করত। তবে একটি বিষয় ছিল প্রশংসনীয়, সে নিয়মিত ক্লাস করত। পারতপক্ষে ক্লাস ছাড়ত না।
১০ম ক্লাসে যখন সে এক্সটেম্পরি স্পিচ—যেখানে আপনি আগে থেকে জানেন না কোন বিষয়ে বলবেন—দেওয়ার জন্য দাঁড়ায়, দেখলাম সে আগের থেকে বেশ ভালোই ইংরেজিতে বলে যাচ্ছে। ১২শ ক্লাসে সে একটি ভুল প্রেজেন্টেশন তৈরি করে নিয়ে এসেছিল। যখন বুঝতে পারে যে সে ভুল করেছে, সাথে সাথে ক্লাসে বসে সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করে এবং কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই সেটাকে সবার সামনে প্রেজেন্ট করে। তার অগ্রগতি মোটামুটি সবাইকে অবাক করে দেয় এবং শেষ ক্লাসে সবার ভোটে সে The Student with the Most Development পুরষ্কারও পায়।
- আমি ন্যাচারাল না।
- আমি ইংরেজি বলতে পারি না।
- আমি বড় বেশি অন্তর্মূখী, তাই সবার সামনে দাঁড়ালে কেমন আড়ষ্ট হয়ে থাকি।
- প্রেজেন্টেশনে দাঁড়ালে আমাকে কেমন বোকার মতো লাগে।
- প্রেজেন্টেশনকে আমি প্রচণ্ড ভয় পাই।
- আরো কত কী!
এরপর ভালো কোনো প্রেজেন্টেশন দেখলেই আমরা অবচেতন মনে তার সাথে নিজেদেরটাকে তুলনা করে ফেলি এবং যেহেতু আমাদেরটা এই মুহূর্তে অত ভালো না, তাই শুধু আওড়াতে থাকি — আমাকে দিয়ে প্রেজ্ন্টেশন বা পাবলিক স্পিকিং হবে না। কিন্তু একটি জিনিস আমরা প্রায়ই মিস করে যাই যে, ঐ ভালো প্রেজেন্টেশনটি এমনি এমনি আসেনি বা কোনো জন্মগত কারণে হয়নি, বরং সেটা এসেছে শুধুমাত্র অনুশীলনের ফলে।
আমরা স্টিভ জবসের আইফোনের প্রেজেন্টেশন দেখে তাজ্জব বনে যাই। ইতিহাসের বই পড়ে জানি যে, স্যার উইনস্টন চার্চিল ১৮০ শব্দের ছোট্টো একটি স্পিচ দিয়ে হিটলারের আগ্রাসন থামিয়ে দিয়েছিলেন। আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে দেখি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর স্পিচ দিয়ে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে। প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো কি কোনো আত্মনিয়োগ ছাড়া স্বহজাতভাবেই এসেছে?
স্টিভ জবস
কারমাইন গ্যালো স্টিভ জবসের প্রেজেন্টেশনকে বিশ্লেষন করে একটি বই লিখেছেন যার নাম — Presentation Secrets of Steve Jobs. এ বইতে তিনি বলেছেন যে, স্টিভ জবস ন্যাচারাল কোনো প্রেজেন্টার ছিলেন না। তাঁর প্রথমদিকের প্রেজেন্টেশনগুলো থেকে পরিণত বয়সের প্রেজেন্টেশনগুলো অনেক বেশি সাবলীল। আর এ কারণেই সেগুলো এত বেশি জনপ্রিয়। এ দুই সময়ের প্রেজেন্টেশনের মধ্যে দূরত্ব কত জানেন? ৩০ বছর! এই ৩০ বছর জুড়ে তিনি একের পর এক প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন এবং একেকটি প্রেজেন্টেশনের পূর্বে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা অনুশীলন করেছেন। সূতরাং স্টিভ জবস পাবলিক স্পিকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন ৩০ বছর ধরে পরিশ্রমের ফলে।
স্যার উইন্সটন চার্চিল
স্যার উইন্সটন চার্চিল ২৯ বছর বয়সে নবনির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে যখন বক্তৃতা দেন, শুরুতে তিনি টানা ৩ মিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোনো কথা বলতে পারেননি। তিনি অতিরিক্ত উদ্বেগের ফলে সবকিছু ভুলে গিয়েছেন। অথচ এই উইন্সটন চার্চিল যখন তাঁর ১৮০ শব্দের আবেগঘন বক্তব্য দেন এবং হিটলারের শক্তিশালী জার্মানিকে পরাস্ত করেন, তখন তিনি ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর বয়স ছিল ৬৫ বছর। মাঝখান দিয়ে ৩৬ বছর কেটে গিয়েছে, যে সময়টা জুড়ে তিনি তাঁর পাবলিক স্পিকিংকে ধারালো করেছেন। বরিস জনসন তাঁর The Churchill Factor বইয়ে এ নিয়ে বিষদ আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি স্যার উইনস্টন চার্চিলের পাবলিক স্পিকিং এ দক্ষতা রপ্ত করাকে সম্বোধন করেছেন A triumph of effort and preparation হিসেবে।
আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার
ইংরেজি না জানা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার অস্ট্রিয়ায় বসে স্বপ্ন দেখতেন একদিন হলিউডের অভিনেতা হবেন। যখন তিনি অবশেষে আমেরিকায় পাড়ি জমান, তিনি অনেকের কাছে গিয়েছেন হলিউডে কোনোভাবে একটু সুযোগ পাওয়ার জন্য। কিন্তু সবাই তাকে ইংরেজি না জানা ও আরও সমস্যার কথা বলে প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তিতে তিনি ইংরেজি শেখার জন্য ও ভারী জার্মান উচ্চারণ দূর করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। পরে তিনি হলিউড হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং অনেক সাধনা করে পাবলিক স্পিকিং এ দক্ষ হয়ে উঠেন।
আমি এ রকম আরও অনেক উদাহরণ টানতে পারব যেখানে আমরা একই চিত্র দেখব যে, কেউই এমনি এমনি ভালো প্রজেন্টার বা পাবলিক স্পিকার হননি। বরং তাদের স্পিকার হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে বছরের পর বছর এর পেছনে লেগে থাকার গল্প। তাই যদি আপনার কোনো সহকর্মী বা বস বা অন্য কারো প্রেজেন্টেশন দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি ধরেই নিতে পারেন যে, শুধুমাত্র অনুশীলনের ফলেই সে আপনাকে মুগ্ধ করতে পেরেছে। অন্য কোনো কারণে না।
আমরা যদি ভালো স্পিকার বা প্রেজেন্টার না হয়ে থাকি, তার কারণ ঐ নেগেটিভ ব্যাগেজগুলোর একটিও না। বরং এর কারণ একটিই এবং তা হচ্ছে, আমরা প্রেজেন্টেশন বা স্পিকিং এর উপর মনোনিবেশ করছি না এবং এর পেছনে যথাযথ সময় দিচ্ছি না। সুতরাং আপনি যদি একজন ভালো প্রেজেন্টার হতে চান, তাহলে এখনই কাজে নেমে পড়েন, বেশি বেশি প্রেজেন্টেশন দেন ও অনুশীলনে মেতে উঠেন। আর কখনোই—আমি ন্যাচারাল না, বা আমি ইংরেজি বলতে পারি না, বা প্রেজেন্টেশনে দাঁড়ালে আমাকে কেমন বোকার মতো লাগে, বা প্রেজেন্টেশন আমি প্রচণ্ড ভয় পাই, বা আমি খুবই অন্তর্মূখী—এ ধরনের বিভিন্ন অর্বাচীন চিন্তা দিয়ে নিজের মনকে ভারী করে তুলবেন না। নাসিম নিকোলাস তালেব তাঁর চমৎকার বই Antifragile এ বলেছেন — We are largely better at doing than we are at thinking. তাই কোনো চিন্তা না করে এখনই কাজে নেমে পড়েন। আমি বেশ দৃঢ়ভাবেই বলতে পারি যে, আপনি খুব শীঘ্রই সুড়ঙ্গের অপর পাশে আলোর ঝলক দেখতে পারবেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে — কীভাবে আপনি কাজে নেমে পড়বেন? বা অনুশীলন করবেন?
জেফ কলভিন তার Talent is Overrated বইয়ে বলেছেন — কোনো কাজে দক্ষ হওয়ার জন্য আপনার অনুশীলনের ৫টি উপাদান থাকা দরকার।
- It’s designed specifically to improve performance
- It can be repeated a lot
- Feedback on results is continuously available
- It’s highly demanding mentally
- It isn’t much fun