unschooled mind
Unschooled Mind

আনস্কুলড মাইন্ড

সে দিন একটা বাচ্চাকে বললাম, নাও এই বাংলা লেখাটা পড়ো। লেখাটা দেখে সে বলল, মিস তো আমাদের এভাবে বাংলা পড়া শিখায়নি। আমি বললাম কীভাবে শিখিয়েছে? তার উত্তর — ক থেকে ঁ পর্যন্ত শিখিয়েছে এবং আকার-ইকার শিখিয়েছে।

তার প্রায় সমবয়সী এক বাচ্চাকে একই লেখা দিলাম পড়ার জন্য। সে বেশ সহজেই পড়ে ফেলল। মজার ব্যাপার হলো, সে ক-খ পারে না। আর আকার-ইকারের নামই শুনে নাই। কিন্তু বাংলা লেখা সে পড়তে পারে।

রিসার্চ বলে — বাচ্চাদের যখনই অ্যারিথমেটিক শেখানো হয়, তাদের কাউন্ট করার দক্ষতা কমে যায়। অ্যারিথমেটিক না পড়া বাচ্চাদের যদি  জিজ্ঞেস করেন, ১৫টা পোলের মধ্যে কয়টা ইন্টারভেল আছে, তারা সামহাও বের করে ফেলে ১৪টা। কিন্তু যে সব বাচ্চা অ্যারিথমেটিক পড়ে তাদের জিজ্ঞেস করেন, তারা কনফিউজড হয়ে যায় এবং ভুল করে বলে ফেলে ১৫টা।

unschooled mind

এর কারণ কী?

স্ট্যানফোর্ড, এমআইটি ও ইউসিএলএ এই তিন ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে ব্লু কালার নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করা হয়। ইংলিশে ব্লু একটাই কালার। এর বিভিন্ন শেড থাকতে পারে, তবে কালার একটাই। কিন্তু রাশান ল্যাঙ্গুয়েজে ব্লু আলাদা আলাদা দুইটা কালার—গলুবয় বা লাইট ব্লু ও সিনিই বা ডার্ক ব্লু। ব্লু কালারের ভিন্ন ভিন্ন শেড দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা হলে ইংলিশ স্টুডেন্টরা শুধু বিভিন্ন শেডের ডিফারেন্স চেক করে। কিন্ত রাশান স্টুডেন্টরা শুধুমাত্র শেড ডিফারেন্সই চেক করে না, বিভিন্ন শেড, লাইট ব্লুতে পড়ল না কি ডার্ক ব্লুতে পড়ল সেটাও চেক করে। শুধুমাত্র ব্লু থেকে লাইট ব্লু বা ডার্ক ব্লু এই ছোট একটা ক্যাটাগোরাইজেশন পুরা প্রসেসটাকেই কঠিন করে তোলে।

অন্য এক এক্সপেরিমেন্টে, পার্টিসিপ্যান্টদের ভিন্ন ভিন্ন ইংরেজি শব্দ জোড়া দিয়ে বলা হয় কী প্রেস করতে যদি শব্দ দুটি ছন্দে থাকে। যেমন —

  1. Vote — Note
  2. Cote — Dote
  3. Vote — Goat

প্রতিটা শব্দ জোড়াতেই রাইমিং হয়, কিন্তু প্রথম দুইটা উদাহরণের ক্ষেত্রে পার্টিসিপ্যান্টরা যত দ্রুত কী প্রেস করে, তৃতীয়টার ক্ষেত্রে অত দ্রুত কী প্রেস করতে পারে না। কারণ বানানে পার্থক্য। যদিও তাদের এটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার ছিল না, তাদের শুধু দেখা দরকার শব্দ দুইটা রাইমিং করে কি না। তারপরও তারা সেই চিন্তার মধ্যে ঢুকে যায় এবং সহজ বিষয়টাকে কঠিন করে ফেলে।

উপরের দুইটা এক্সপেরিমেন্ট থেকে পরিষ্কার — আপনি যদি সহজ কোনো এক প্রসেসকে কঠিন করতে চান বা আমাকে স্কিউইং এফেক্টের মধ্যে ফেলতে চান, তাহলে ঐ প্রসেসের মধ্যে একটা ফরমালিটি বা পদ্ধতি বা ডিটেইল বা ক্যাটাগোরাইজেশন, কিছু একটা ঢুকায়ে দেন। ব্যস, আপনার কাজ শেষ — I will be tainted by skewing effect.

প্রথম যে বাচ্চাটার কথা বললাম, সে মোটামুটি স্কিউইং এফেক্টের মধ্যে ঢুকে বসে আছে। সে প্রসেস খুজছে — প্রথমে ক-খ-গ, তারপর আকার-ইকার। এরপর অপেক্ষা করছে ইনস্ট্রাকশনের জন্য। অর্থাৎ সে ইনক্রিমেন্টাল ডিফিকাল্টির উপর ভর করে তৈরি করা একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে এটা শিখে ফেলেছে। এটাই হলো সমস্যা, কারণ বাস্তবে কিছুই পাবেন না যা ইনক্রিমেন্টাল ডিফিকাল্টিকে তোয়াক্কা করে। সেখানে অনেক চড়াই-উতড়াই থাকবে, থাকবে অনেক কিছু এক সাথে চিন্তা করার ব্যাপার।

দ্বিতীয় বাচ্চাটা এই স্কিউইং এফেক্ট থেকে মুক্ত। সে কোনো প্রসেস শিখে নাই। তার কাছে টেক্সট পড়াটা অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট বর্ণমালা বা আ-কার ই-কার পারা থেকে। সে দিন তাকে ম্যাথমেটিক্স টিচার এডি উর লেখা ‘ইটস আ নাম্বারফুল ওয়ার্ল্ড’ বই থেকে পড়তে বলি। বইটা তার জন্য অনেক অ্যাডভান্সড। তারপরও সে পড়তে থাকে। কিছু কিছু বুঝেছে, কিন্তু ম্যাক্সিমামই বুঝে নাই এবং সে এ ব্যাপারে মোটেও চিন্তিত না। তার মানে সে তার লেভেল বোঝে না। আর এটাই হলো সবচেয়ে ভালো দিক। সে নিজেকে কোনো ইনহিবিশনে ফেলে না।

I'm sharing!

Leave a Reply